
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার অভিযোগে তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৫ বছর পর আজ বুধবার (১২ মে) মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, বাবুল আক্তারের বাদী হয়ে দায়ের করা পুরোনা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বেলা সোয়া ১২টার দিকে তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে পিবিআইয়ের দুজন কর্মকর্তা আদালতে নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। পরে সেটি নথিভুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়েছে, তদন্তে পুরনো মামলার বাদি বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে। এ কারণে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর নতুন মামলা করা হয়েছে।এর আগে মঙ্গলবার (১১ মে) সকালে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে যান। সেখানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমাসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একটি টিম বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় যোগাযোগ করা হলে পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, মামলার বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারের সঙ্গে তারা শুরু থেকে যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, সেটি অব্যাহত আছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘তিনি (বাবুল আক্তার) আগেও এসেছিলেন। আজকেও (মঙ্গলবার) পিবিআইতে গেছেন। মামলার বাদী হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাইকোর্টের রুলিং আছে, এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।’
রাত পৌনে ১০টার দিকে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের বরাত দিয়ে সংস্থার সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ‘বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে মামলার তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে। এই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৬ সালে হত্যাকাণ্ডের বছরখানেক পর থেকেই মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে।
মিতু হত্যা মামলায় ওই বছরের ৮ জুন ও ১১ জুন নগর গোয়েন্দা পুলিশ হাটহাজারি উপজেলা থেকে আবু নসুর গুন্নু ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার শীতল ঝর্ণা থেকে শাহ জামান ওরফে রবিন নামে দু’জনকে গ্রেফতারের খবর জানায় পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিতু হত্যায় তাদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর তারা জামিনে মুক্তি পান।
ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর ফলে সন্দেহের তীর যায় বাবুলের দিকে। হত্যায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন।
২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দু’জনের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ করে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। জানান, মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি তাদের ভোলা দিয়েছিল।
এরপর এহেতাশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনিরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়, যেটি মিতু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে একটি অস্ত্র মামলাদায়ের করা হয়।
এরপর ১ জুলাই মোটরসাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগে মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু ও শাহজাহান নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভোলা, সাইদুল ও রবিন এরই মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
কিছুদিন নিশ্চুপ থাকার পর ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বাবুল আক্তার। নানা নাটকীয়তা শেষে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি তদন্ত করে আসছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে।
আরও পড়ুন- গ্রেফতার নয়, পিবিআই হেফাজতেই বাবুল আক্তার মিতু হত্যায় স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদThe post মিতু হত্যায় স্বামী বাবুলকে আসামি করে ৫ বছর পর মামলা appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.
Thank you to read this post.
0 Comments