বরিশাল: জেলার উজিরপুরে হত্যা মামলার এক নারী আসামিকে (৩০) রিমান্ডে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও উজিরপুর থানার ওসি, পরিদর্শকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
উজিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মমিন উদ্দিন সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন- উজিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার, সদ্য প্রত্যাহার হওয়া উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল ইসলাম। এছাড়া অজ্ঞাত তিন জনকে আসামি করা হয়েছে।
পরিদর্শক মমিন উদ্দিন জানান, আদালতের নির্দেশে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে যৌন নির্যাতনের শিকার ওই নারী মামলাটি করেছেন।
বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হাসান বলেন, ‘ওই নারীর বিবৃতি আমরা আদালতের মাধ্যমে পেয়েছি। সেভাবেই মামলা রেকর্ড করেছি। বিবৃতিতে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টির তদন্ত চলছে।’
এর আগে সোমবার সকালে উজিরপুর মডেল থানার ওসি ও পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় উজিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল ইসলাম ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ওসি জিয়াউল আহসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৭ জুন বাসুদেবের ভাই বরুণ চক্রবর্তী উজিরপুর মডেল থানায় শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। সেখানে ওই নারীসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়। ওই নারীর সঙ্গে বাসুদেবের পরকিয়া ছিল বলে দাবি করেন বরুণ চক্রবর্তী।
পরে মামলার আসামি হিসেবে ওই নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থানা পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৯ জুন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালত ওই নারীর দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এ সময় ওই নারীকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে এর কারণ জানতে চান আদালত। ওই নারী পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। আদালত একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে পরীক্ষা করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পান। এরপর আদালত আইন অনুযায়ী তার বিবৃতি লিপিবদ্ধ করেন।
পাশাপাশি আদালত তার যথাযথ চিকিৎসা এবং নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে। এরইমধ্যে হাসপাতাল পরিচালক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, যাতে আঘাতের চিহ্নের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
আদালতে ওই নারী আসামি অভিযোগ করেন, ২৯ জুন রিমান্ডে নেওয়ার পর তাকে মারধর না করা হলেও পরের দিন (৩০ জুন) সকালে তাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে পাঠানো হয়। সেখানে তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয়। এরপর এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে নিয়ে তাকে আবার লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই তাকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে পেটান। তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখতে পান।
তবে শুরুতে এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
The post রিমান্ডে নারীকে যৌন নির্যাতনে এএসপি-ওসিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.
Thank you to read this post.
0 Comments