ঢাকা: রাজধানীর কাঁটাবনে পোষা প্রাণীর দোকানগুলো থেকে আবার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় খাদ্য-পানি-আলো-বাতাসের অভাবে মারা যাচ্ছে পশু, পাখি ও অ্যাকুরিয়ামের মাছ। চলমান ‘কঠোর লকডাউনে’ গত ১০ দিনে বেশকিছু প্রাণী মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোষা প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে এক ঘণ্টা পর পর পরিচর্যা করতে হয়। দোকানের শাটার বন্ধ করলেই প্রাণীগুলোর মৃত্যুর সম্ভবনা থাকে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, পরিমাণ মতো খাবার এবং কিছুক্ষণ পর পর পানি না দিলে পোষা প্রাণীগুলো দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ প্রাণীকে সময় মতো পরিচর্যা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিলে মারা যায়। এ পর্যন্ত বেশ কিছু পশু-পাখি-মাছ মারা গেছে।
জানা গেছে, গত বছর ১২ এপ্রিল কাঁটাবনস্থ অ্যাকুয়া অ্যান্ড পেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটা মানবিক আবেদন করা হয়। সেই আবেদনে লকডাউনের মধ্যে পশু ও মাছের জরুরি খাবার সরবরাহ ও পরিচর্যার জন্য দোকান খোলার অনুমতি চাওয়া হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পোষা প্রাণী ও অ্যাকুরিয়ামের মাছের জরুরি খাদ্য, ওষুধ, আলো-বাতাস সরবরাহ এবং পরিচর্যার জন্য দিনে দুইবার এক ঘণ্টা করে দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করীম।
মন্ত্রীর ওই মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে গত বছর লকডাউনের (সাধারণ ছুটি) মধ্যে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে দুই বার দোকান খুলে পোষা প্রাণী ও মাছের খাবার দিতেন দোকান মালিকেরা। আগের নির্দেশনা অনুযায়ী এবারও ‘কঠোর লকডাউনের’ মধ্যে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে দুই বার দোকান খুলছেন তারা।
তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মন্ত্রীর নির্দেশনার পরও পশু-পাখির পরিচর্যার জন্য দোকান খুলতে গেলে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রাণীদের বাঁচাতে দোকানের শাটার তুললেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়। অবশ্য দীর্ঘক্ষণ আটক রেখে আবার ছেড়েও দেয়। এ পর্যন্ত ১৫/২০ জনকে আটক করে আবার ছেড়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাটাবনস্থ অ্যাকুয়া অ্যান্ড পেট অ্যাসোসিয়েশন ও কাঁটাবন দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম লিটন সারাবংলাকে বলেন, ‘মানুষের জন্য যেমন খাবারের দোকান, জরুরি ওষুধ, নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রাখা হয়েছে, তেমনিভাবে পোষাপ্রাণীদের জন্য ‘অ্যাকুয়া অ্যান্ড পেট’র দোকান খোলা রাখা দরকার। মানুষ না খেতে পারলে যেমন মারা যায়, তেমনি পোষাপ্রাণীরাও না খেতে পারলে মারা যায়- এ বিষয়টি কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে না, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।’
‘আমরা তো বিলাসিতা বা ব্যবসার জন্য দোকান খুলছি না। পোষা প্রাণীগুলোর প্রাণ বাঁচাতে দোকান খুলছি। কিন্তু দোকান খুলতে গেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের লোকজনদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আজও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের আত্মীয়-স্বজন গিয়ে এখনও থানায় বসে আছে। এমতাবস্থায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি’— বলেন নূরে আলম লিটন।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জীবন্ত পশু-পাখি এবং মাছের দোকান প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে ৯ টা এবং বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলার নির্দেশনা দেওয়া আছে। এর মধ্যে দোকান খুললে কোনো সমস্যা নেই। তবে এই নির্দেশনার বাইরে কেউ দোকান খোলা রাখলে সরকার ঘোষিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘গতকাল আমি নিজে গিয়ে কাঁটাবনস্থ পশু-পাখি ব্যবসায়ীদের এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে আসছি। সমস্যা হচ্ছে তারা সারাদিনই দোকান খোলা রাখতে চায়। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে তাদের এই আবদার পূরণ করা সম্ভব না’— বলেন মো. সাজ্জাদুর রহমান।
অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিনে দুইবার দোকান খুলে প্রাণীদের খাবার-পানি দেওয়ার যে নির্দেশ সেটা শীত মৌসুমের জন্য মোটামুটি মানানসই হলেও এই গরমের মধ্যে মোটেও মানানসই নয়। বেড়াল-কুকুরের মতো প্রাণীগুলো একবারে বেশি পানি পান করতে পারে না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি পান করে। আবার বেশি করে পানি দিলে ফেলে দেয়। ফলে দুপুর বেলায় প্রচণ্ড পিপাসায় তারা পানির জন্য কান্না করে।
এ প্রসঙ্গে নূরে আলম লিটন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাস্তব অবস্থা বুঝতে হলে দুপুরবেলা কাঁটাবনে আসতে হবে। ওই সময় প্রাণীগুলো খাবার এবং পানির জন্য কান্না করে। আর শাটার লাগানো থাকায় ভ্যাঁপসা গরমে তারা অস্থির হয়ে যায়। বেচাকেনার জন্য না হোক, প্রাণীগুলো বাঁচার জন্য দোকানের শাটার খুলে রাখার অনুমতি প্রয়োজন। নইলে প্রাণীগুলো মারা যাবে।’
The post ফের কাঁদছে কাঁটাবনের পোষা প্রাণী appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.
Thank you to read this post.
0 Comments