Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

‘লেখা চুরির’ প্রতিবাদ করায় চিকিৎসক চাকরিচ্যুত

ঢাকা: বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত অন্যের গবেষণার ‘লেখা চুরির’ প্রতিবাদ করায় ঢাকা শিশু হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সহকর্মী ডা. আয়ুব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাব্বির করিম।

চাকরিচ্যুতির কারণ হিসেবে ডা. সাব্বির করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুসারে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি সেই ডা. আয়ুব বহাল তবিয়তে আছেন এখনও। তিনি এখন পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আভ্যন্তরীণ তদন্ত হচ্ছে কি না তা কিন্তু বলা হয়নি।’

এদিকে ডা. সাব্বির করিমের চাকরিচ্যুতি বিষয়ে তার আইনজীবী গোলাম রব্বানী শরীফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রুল জারির পরও জবাব না দিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো ডা. সাব্বিরকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হবে।’

এর আগে হাইকোর্টে সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন ডা. সাব্বির করিম। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পদোন্নতিসহ নানা সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি ডা. আয়ুব আলীর নামে অন্যের লেখা চুরির অভিযোগ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ২৯ জুন, ডা. আয়ুব আলীর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে। রুলে স্বাস্থ্যসচিব, ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকরী পরিচালক (প্রশাসন), প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিচালনা বোর্ড, নিয়োগ কমিটি-১ এবং আয়ূব আলীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

তবে রুল জারির চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেয়ার আগেই ১১ জুলাই ডা. সাব্বিরকে চাকুরিচ্যুত করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক। সেই সঙ্গে দফায় দফায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠা সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিকিৎসকরা বলেন, বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত অন্যের গবেষণা প্রতিবেদন নকল করেছিলেন ডা. আয়ুব আলী। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেন করেন ডা. সাব্বির। শুনানি শেষে গত ২৮ জুন বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর রুল জারি করে হাইকোর্ট।

চিকিৎসকরা জানায়, ডা. আয়ুবের চৌর্যবৃত্তির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এ বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। এমনকি তাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদও করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসকরা আরও জানায়, ডা. আয়ুব গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর তিনি ২০০৭ সালে শিশু হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ২০১৬ সালে নিয়মবর্হিভূতভাবে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পান। নিয়ম অনুযায়ী মেডিকেল অফিসার থেকে রেজিস্ট্রার হিসেবে তার পদোন্নতি পাবার পরই তার সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পাওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান শিশু হাসপাতালে এমএস সম্পন্ন করেন। তার থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘patio repair’। সেই গবেষণার বেশিরভাগ তথ্য, পরিসংখ্যান, কেস স্টাডি এবং ফলাফল নকল করে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের ইস্যু-৩১, ভলিউম-২ জার্নালে নিজের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ডা. আয়ুব। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তিনি রেজিস্ট্রার না হয়েই সরাসরি সহকারী অধ্যাপক হন।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, নেপাল মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালের জার্নালে প্রকাশিত শিশু সার্জারি বিভাগের ডা. জেসমিন ব্রজাচারিয়ার গবেষণার শিরোনাম ছিলো ‘surface staroid in microfelic hypospadias’। তা প্রকাশ হয় ২০১৮ সালে। অথচ একই টাইটেল এবং বিষয়বস্তু হুবুহু নকল করেন ডা. আয়ুব।

আদালতের চলমান বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাফি আহমেদ মুয়াজ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও উচ্চ আদালতের কোনো কাগজ হাতে পাইনি। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

The post ‘লেখা চুরির’ প্রতিবাদ করায় চিকিৎসক চাকরিচ্যুত appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.



Thank you to read this post.

Post a Comment

0 Comments