
ভারতে প্রতিদিনের লাগামহীন করোনা সংক্রমণ এবং কোভিডজনিত মৃত্যু প্রতিবেশী বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহতার বার্তা নিয়ে আসছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অপ্রতুলতার কারণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ বন্ধ করে দেওয়া এবং করোনার দ্রুত সংক্রমণক্ষম কিছু ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও শনাক্ত হওয়া।
করোনা সংকটে বাংলাদেশ এবং ভারত কিভাবে যুগপৎ নিমজ্জিত হতে পারে, সেই সম্ভাবনা এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে টাইম ম্যাগাজিনে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, সারাবাংলার পাঠকদের জন্য ওই প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হচ্ছে —
চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের করোনা আক্রান্তদের কয়েকজনের মধ্যে দ্রুত সংক্রমণক্ষম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও বাংলাদেশের করোনা টেস্টের নমুনাগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য একটি ভ্যারিয়েন্টের আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। ভয়ের বিষয় হলো — ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রথম ব্যাচের ভ্যাকসিনগুলোর নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকারিতাও কিছুটা কম বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্চ-এপ্রিল মাসের সংক্রমণ হারের তুলনায় সর্বশেষ দুই সপ্তাহে সংক্রমণ কিছুটা কমে এসেছে। তবে, তার কারণ কী, তা জানা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এই সুযোগে বাংলাদেশের উচিত ভ্যাকসিন কর্মসূচি জোরদার করা।
কিন্তু, বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের প্রধান এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সরবরাহকারী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। নিজেদের দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং সংকটের কথা তুলে তারা আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভ্যাকসিন দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। অথচ, কথা ছিল প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সেরাম। তার মধ্যে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে।
সেখানেই সমস্যার শুরু — এমনটাই মনে করছেন আইডিসিআর'র বিজ্ঞানী ড. এ এস এম আলমগীর।
এদিকে, ভ্যাকসিন হাতে না থাকায় বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই প্রথম ডোজের করোনা ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়াও শঙ্কার মুখে পড়েছে।
এর মধ্যেই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। রাশিয়া এবং চীনের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তার মধ্যে, বেইজিংয়ের উপহার পাঁচ লাখ ডোজ দেশে এসে পৌঁছেছে। ভ্যাকসিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে।
এ ব্যাপারে আইসিডিডিআর'র এর বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, যখন ভ্যাকসিনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে তখনই নতুন ভ্যারিয়েন্ট মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়াও বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, সেখান থেকে মানুষ এবং পণ্য আসা যাওয়াও প্রচুর। তাই, ভারতের ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে যে সংক্রমণের নতুন ঢেউ নিয়ে আসছে না — সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন অবধি সরকারি হিসেবে প্রায় আট লাখের কাছাকাছি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে কোভিডজনিত মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজারের বেশি মানুষের।
যদিও, ১৬ মে পর্যন্ত করোনা মোকাবিলায় সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, তার মধ্যেই বাংলাদেশের মার্কেট এবং গণপরিবহনের ভিড় দেখার মতো পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য গাদাগাদি করে লোকজন রাজধানী ছেড়ে গিয়ে প্রান্তিক জনপদে ভিড় বাড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা টাইম ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন, যেহেতু মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি, তাই আগামীতে করোনা যে আরও ভয়াবহভাবে বাংলাদেশকে গ্রাস করতে যাচ্ছে — তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
The post ভারতের করোনা পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের ভয় appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.
Thank you to read this post.
0 Comments